আমাদের কালাই ঘর
কালাই রুটি হলো বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার বিখ্যাত ও ঐতিহ্যবাহী খাবার। এটি সংরক্ষণযোগ্য খাবার যা মাস কলাই ও আতপ চালের আটা বা ময়দা, লবণ এবং পানি দিয়ে তৈরি করা হয়।
প্রাপ্তিস্থান
বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় কালাই রুটি পাওয়া যায়। এই অঞ্চলে মাছ-ভাত-ডালের মতই বহুল প্রচলিত একটি খাবার। শহরের প্রায় সকল জায়গায় চোখে পড়বে কালাই রুটির দোকান। এই জেলা ছাড়াও উত্তরবঙ্গের রাজশাহী, নওগাঁ এবং ঢাকাতেও কালাই রুটি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
রন্ধনপ্রণালী
প্রথমে মাষকালাই ও আতপ চাল পাটাতে বা যাঁতাতে পিষে আটা বানানো হয়। মেশিনে তৈরী আটা দিয়েও কালাই রুটি বানানো গেলেও পাটায় পিষ্ট আটা দিয়ে কালাই রুটি বানালে স্বাদ বৃদ্ধি পায়। এর সাথে স্বাদমতো লবণ ও প্রয়োজনীয় পরিমাণ পানি মিশিয়ে খামির তৈরী করা হয়। খামির থেকে ছোট বল পরিমাণ আটা নিয়ে গোলাকার করা হয়। এরপর দুই হাতের তালুতে রেখে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে বড় রুটি বানানো হয়। সাধারণত গমের রুটির চেয়ে কালাই রুটি অধিক পুরু এবং বড়। এরপর রুটিটিকে মাটির তাওয়াতে সেঁকে গরম করা হয়। রুটির রঙ বাদামী হয়ে গেলে নামিয়ে নেওয়া হয়।
খাবার পদ্ধতি
কালাই রুটির সাথে সাধারণত বেগুন ভর্তা, শুকনো মরিচ ভর্তা, বট, পেঁয়াজ ভর্তা, মাংস ভুনা ইত্যাদি দিয়ে পরিবেশন করা হয়। এসবের সাথে রুটির টুকরোর ছিড়ে গরম গরম খাওয়া হয়।
মূল্য
কালাই রুটির দাম সাধারণত ৩০ থেকে ৩৫টাকার মধ্যে হয়। তবে কোন কোন স্থানে বিশেষ কালাই রুটি বানানো হয়, যার মূল্য ৫০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
পুষ্টিগুণ
মাষকলাইয়ে থাকে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, মিনারেল (জিঙ্ক, ফসফরাস, ক্যালসিয়াম) ও অল্প পরিমাণে ফ্যাট আর চালে কার্বোহাইড্রেট, সামান্য প্রোটিন ও ফ্যাট। তবে কলাইয়ের চেয়ে চালে ফ্যাটের পরিমাণ বেশি। চালের এবং মাষকলাইয়ের ময়দার সংমিশ্রণে তৈরি হয় কালাই রুটি। এই রুটিতে যে পরিমাণ মিনারেল থাকে তা শরীরের জন্য খুবই উপকারী। বিশেষ করে কার্বোহাইড্রেট শরীরের গঠন মজবুত ও অতিরিক্ত শক্তি জোগায়। মিনারেলগুলো শরীরের বিপাকক্রিয়া সম্পন্ন করে। এছাড়া কালাই রুটিতে প্রোটিনের পরিমাণ বেশি থাকায় তা শরীরের গঠন মজবুত করে। ডায়াবেটিস রোগীদের ভাতের চেয়ে রুটি খাওয়াই বেশি ভালো। সেক্ষেত্রে কলাই রুটি তাদের জন্য অধিক উপকারী।